রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

রমজানোত্তর আমলের ধারাবাহিকতা

এইচ এম মনিরুজ্জামান:
পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও মুমিন-মুসলমানরা সারা বছরই রমজানে কৃত আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। সারা বছর কীভাবে রমজানে কৃত আমলগুলোর ধারা চালু রাখা যায়, সে বিষয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো

রোজা রাখার ধারা : রমজানের রোজা শেষ হলেও অবশিষ্ট মাসগুলোতে বহু নফল রোজা রয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী সেসব রোজা রাখার চেষ্টা করা। যেমন

শাওয়াল মাসের ছয় রোজা : হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল। অতঃপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ সহিহ মুসলিম : ১১৬৪

আইয়ামে বিজের রোজা : প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তিন দিনের রোজাকে (আইয়ামে বিজের রোজা) বলে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা এবং রমজান মাসের রোজা সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।’ সহিহ মুসলিম : ১১৬২

আর এ রোজা প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখা উত্তম। পরিভাষায় এ দিনগুলো ‘আইয়ামে বিজ’ নামে পরিচিত। ‘বিজ’ আরবি শব্দ, অর্থ সাদা, উজ্জ্বল। প্রত্যেক চান্দ্রমাসের এ দিনগুলোতে যেহেতু চাঁদের আলো পূর্ণ উজ্জ্বল থাকে এজন্য এই তারিখগুলোকে ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়।

প্রতি বৃহস্পতি ও সোমবার রোজা রাখা : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল পেশ হোক এমতাবস্থায় যে, আমি তখন রোজাদার।’ জামে তিরমিজি : ৭৪৭

আরাফার দিনের রোজা : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করি যে, (এর দ্বারা) বিগত বছরের এবং পরবর্তী বছরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ সহিহ মুসলিম : ১১৬২

আশুরার রোজা : হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজা সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এর দ্বারা তিনি বিগত বছরের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ সহিহ মুসলিম : ১১৬২

শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা : শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখা উত্তম। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাস ছাড়া বছরের অন্য কোনো মাসে এত অধিক (নফল) রোজা রাখতেন না। সহিহ মুসলিম : ৭৮২

নফল নামাজের ধারা : রমজানের দীর্ঘ তারাবির নামাজ শেষ হয়েছে। এই তারাবি দ্বারা লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থেকে একসঙ্গে অনেক রাকাত নামাজ আদায় করার একটা ভালো অভ্যাস সৃষ্টি হয়েছে। এ অভ্যাস পুরো বছরই রক্ষা করা উচিত। নিম্নে এ আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষার কয়েকটি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হলো

সুন্নত নামাজের গুরুত্ব : দৈনিক ফরজ নামাজ-সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা নামাজ আদায় করা। যথা জোহরের আগে চার রাকাত, পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের আগে দুই রাকাত। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিবারাত্রিতে ১২ রাকাত (সুন্নত) নামাজ আদায় করবে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে।’ সহিহ মুসলিম : ৭২৮

ইশরাক/চাশত : প্রতিদিন সকালে দুই/চার রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়া। সূর্যোদয়ের প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর থেকে এই নামাজ পড়া যায়। এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে। রাসুলে পাক (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি দিনের শুরুতে আমার জন্য চার রাকাত নামাজ আদায় করো, আমি পুরো দিন তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।’ জামে তিরমিজি : ৪৭৫

তাহিয়্যাতুল অজু : দুই রাকাত করে তাহিয়্যাতুল অজু ও দুখুলুল মসজিদ নামাজ নিয়মিত অনায়াসেই আদায় করা যায়। অজুর পর মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে বিলম্ব না করে দুই রাকাত নামাজ পড়া মোস্তাহাব। এই নামাজকে ‘তাহিয়্যাতুল অজু’ বলা হয়। হাদিস শরিফে এই নামাজের অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে। অতঃপর দেহ-মন (আল্লাহর দিকে) ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে, সে (যেন) নিজের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিল।’ সুনানে আবু দাউদ : ১৬৯

তাহিয়্যাতুল মসজিদ : মসজিদে প্রবেশ করে সময় থাকলে বসার আগে এবং মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে অন্তত দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ আদায় করা মোস্তাহাব। রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, সে যেন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নেয়।’ সহিহ বোখারি : ৪৪৪

কিয়ামুল লাইল : কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ নামাজ রমজান ও রমজানের বাইরে সারা বছরের নফল নামাজ। তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ও ফজিলত প্রসঙ্গে নবীজি (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম (নফল) নামাজ হলো রাতের নামাজ তথা তাহাজ্জুদ। সহিহ মুসলিম : ১১৬৩

জিকিরের ধারা : হাদিস শরিফে বর্ণিত বিভিন্ন সময় ও মুহূর্তে পঠিতব্য মাসনুন দোয়া ও জিকির, নামাজের পরে ও সকাল-সন্ধ্যার ফজিলতপূর্ণ তাসবিহ ও জিকিরসমূহ নিয়মিত পাঠ করা।

দোয়ার ধারা : দোয়া মুমিনের জীবনের অনেক বড় হাতিয়ার। এর মাধ্যমে সে আল্লাহর কাছ থেকে সবকিছুই আদায় করে নিতে পারে। আর দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি শুধু রমজানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

মুমিনের বৈধ কোনো দোয়াই আল্লাহতায়ালা ফিরিয়ে দেন না। বিলম্বে হলেও বা ভিন্নরূপে কিংবা পরকালের সঞ্চয়রূপে তা কবুল করে থাকেন। এ ছাড়া রমজানের বাইরেও দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ কিছু সময় রয়েছে। যেমন শেষ রাতে, ফরজ নামাজের পর, আজান ও ইকামতের মাঝে, জুমার দিন, কোরআন মাজিদ খতমের পর ইত্যাদি। সুতরাং সাধারণ ও বিশেষ সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়ার মাধ্যমে দোজাহানের যাবতীয় কল্যাণ কামনা করা।

দান-সদকার ধারা : রমজানে জাকাত, সদকাতুল ফিতর এবং অন্যান্য দান-সদকার আমল শেষ হলেও সারা বছর এ আমলের দ্বার উন্মুক্ত। জাকাত ও সাধারণ দান-সদকা রমজানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গোটা বছরই এর সময় এবং তা সব সময়ই ফজিলতপূর্ণ আমল। অতএব সামর্থ্য অনুযায়ী সারা বছরই দান-সদকার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা উচিত। কেননা দান-সদকার দ্বারা সম্পদ হ্রাস পায় না; বরং বৃদ্ধি হয়। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সদকাকে বৃদ্ধি করেন।’ সুরা বাকারা : ২৭৬

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দান-সদকা সম্পদ হ্রাস করে না।’ সহিহ মুসলিম : ২৫৮৮

কোরআন তেলাওয়াতের ধারা : কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদা-সংবলিত একটি আমল। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করল, তার বিনিময়ে সে একটি নেকি লাভ করল। ওই একটি নেকি দশটি নেকির সমতুল্য গণ্য করা হবে। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম একটি হরফ।’ জামে তিরমিজি : ২৯১০

অর্থাৎ অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে যেমন পুরো আমলকে একটি বলে গণ্য করা হয়, কোরআনের ক্ষেত্রে সেরূপ নয়; বরং এখানে প্রতিটি হরফের পরিবর্তে একটি করে নেকি হবে। আর প্রতিটি নেকির বিনিময়ে দশটি করে নেকি পাওয়া যাবে। কোরআন মাজিদ আল্লাহর কাছে পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন পাঠ করো। কেননা তা কেয়ামতের দিন পাঠকারীদের জন্য সুপারিশ করবে।’ সহিহ মুসলিম : ৮০৪

অতএব আসুন, এভাবে সারা বছরের জন্য নেক আমলের ধারা চালু রাখি, অলসতা বর্জন করি। গোনাহমুক্ত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলি।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION